নিউজ ডেস্ক: বরিশালের গৌরনদী উপজেলার অধিকাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের নামে বোর্ডের নির্ধারিত ফি’র চেয়ে দ্বিগুণ ফি আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে পরীক্ষার্থীর অভিভাবকদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
গৌরনদী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানাগেছে, ২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষায় উপজেলায় ২৫টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৪ হাজার নিয়মিত ও ৪০০ অনিয়মিত শিক্ষার্থী অংশ গ্রহন করার সম্ভবনা রয়েছে। ৬ নভেম্বর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত ফরম পূরণ চলবে। বিলম্ব ফি দিয়ে আরও সাত দিন পর্যন্ত ফরম পূরণ করা যাবে। বরিশাল শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে পরীক্ষার কেন্দ্র ফি ৩০০ টাকাসহ ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগের নিয়মিত শিক্ষার্থীর জন্য ১ হাজার ৫০৫ টাকা ও অনিয়মিত শিক্ষার্থীর জন্য ১ হাজার ৭৯৫ টাকা, বিজ্ঞান বিভাগের নিয়মিত শিক্ষার্থীর জন্য ১ হাজার ৫৯৫ টাকা ও অনিয়মিত শিক্ষার্থীর জন্য ১ হাজার ৮৮৫ টাকা পরীক্সার ফি নির্ধারন করেছেন।
তবে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গৌরনদী উপজলার ২৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে বার্থী তাঁরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, টরকী বন্দর বালিকা বিদ্যালয়সহ ৩ থেকে ৪টি স্কুল ছাড়া এ নির্দেশনা বাকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো মানছে না। বোর্ড কর্তৃপক্ষ ও আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে বিদ্যালয় গুলোর প্রধান শিক্ষকরা এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের নামে বোর্ডের নির্ধারিত পরীক্ষার ফি’র চেয়ে অতিরিক্ত পরীক্ষার ফি আদায় করেছে।
চন্দ্রহার কেয়ার শিক্ষায়তনের পরীক্ষার্থী মাফুজা আক্তারের অভিভাবক চন্দ্রহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কেএম সানাউল্লাহ হোসেন জানান, তার ভাতিজা মাফুজা আক্তার বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থী হলেও ভাতিজার কাছে বকেয়া বেতন পাওনা নেই। তিনি মাফুজার পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে ওই স্কুলে গেলে প্রধান শিক্ষক এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের নামে বিভিন্ন খাত দেখিয়ে তার কাছ থেকে ৩ হাজার ৩৪০টাকা নেন। চন্দ্রহার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জীবন কুমার সেনগুপ্ত বলেন, মানবিক বিভাগের পরীক্ষার্থী হতদরিদ্র পূর্নিমা আক্তারের পক্ষে ফরম পূরণের জন্য আমি বুধবার বিকালে চন্দ্রহার কেয়ার শিক্ষায়তনে গেলে প্রাধান শিক্ষক আমার কাছ থেকে ফরম পূরণের নামে ৩ হাজার টাকা নেয়। হতদরিদ্র পরীক্ষার্থী পূর্নিমা আক্তারের পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য কিছু টাকা কম দেয়ার জন্য অনুরোধ করলেও প্রধান শিক্ষক মানবিক বিবেচনা করেননি।
অতিরিক্ত পরীক্ষার ফি নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে চন্দ্রহার কেয়ার শিক্ষায়তনের প্রধান শিক্ষক আবুবক্কর সিদ্দিক বলেন, এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে আগামী তিন মাসের কোচিং ফি ৯০০টাকা ও বকেয়া বেতনসহ ফরম পূরণের টাকা রাখা হয়েছে।
উপজেলার খাঞ্জাপুর পাঙ্গাশিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী হাদিস হাওলাদারের বড় ভাই হাফিজুল হাওলাদার বলেন, আমার ভাইর কাছে স্কুলের কোন বকেয়া বেতন পাওনা নেই। অথচ পরীক্ষার ফরম পূরণে আমার কাছ থেকে বিভিন্ন খাত দেখিয়ে ৪ হাজার টাকা রাখা হয়েছে। একই বিদ্যালয়ের এক পরীক্ষাথীর চাচা কামাল হোসেন বলেন, তাঁর ভাতিজার কাছে বিদ্যালয়ের কোনো বকেয়া বেতন পাওনা নেই। অথচ ফরম পূরণে নানা খাত দেখিয়ে সাড়ে তিন হাজার টাকা নিয়েছে। উপজেলার নলচিড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শরিকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গৌরনদী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, গৌরনদী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পালরদী মডেল হাইস্কুল এন্ড কলেজ, বাটাজোর অশি^নী কুমার মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাহিলাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ অনেক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে একই চিত্র পাওয়া গেছে।
গৌরনদী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিম মিয়া বলেন, এ ব্যাপারে কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ প্রেরন করা হবে।