এস এম শামীম, আগৈলঝাড়া (বরিশাল)
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার যবসেন গ্রামে অবস্থিত নরপর্বত জংশের খানের ঐতিহাসিক ১৮ হাত লম্বা মাজার। আজব এ মাজারটি দেখতে আজও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিনিয়ত দর্শনার্থীরা ভীর জমাচ্ছেন। এছাড়াও নরপর্বত জংশের খানের কল্পকাহিনী আজও আগৈলঝাড়াসহ দক্ষিনাঞ্চলবাসীর মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে। ঐতিহাসিক এ মাজারটি রক্ষনাবেক্ষন করা হলে দর্শনার্থীদের আরও আকৃষ্ট করা যেতে পারে। উপজেলা সদর থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে যবসেন গ্রামে ঐতিহাসিক এ মাজারটি। ঐ গ্রামের মকবুল পাইক (৭০) জানান, জংশের খানের নামানুসারে গ্রামটির নামকরণ করা হয়েছে যবসেন গ্রাম। ঐ গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আহম্মেদ জালালের বাড়িতে জংশের খানের সুবিশাল ১৮হাত লম্বা এ মাজারটি। হঠাৎ করে যে কোন ব্যক্তি জংশের খানের কবরস্থানটি দেখলে চমকে যাবেন। তেমনি হতবাক হবেন নরপর্বত জংশের খানের কল্প কাহিনী শুনলে। স্থানীয় সূত্রমতে, জংশের খানের বাড়ি ছিল উত্তরাঞ্চলে। প্রায় ৫শ বছর আগে তিনি নিজ এলাকা ছেড়ে পায়ে হেঁটে চলে আসেন বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়ায়। নিজ এলাকা ছেড়ে আসার সময় তিনি একটি ধানের ডোলার মধ্যে স্বপরিবারসহ মালামাল মাথায় করে নিয়ে এসেছিলেন। এখানে আসার পরে জংশের খান গৈলার এক জমিদার বাড়িতে পাইক পেয়াদার চাকুরী নেন। ফলশ্র“তিতে তার বংশের খান খেতাব পাল্টে পাইক হন। বর্তমানে ওই বাড়ির ১৪ পুরুষ চলছে। সূত্রমতে, আরও জানাগেছে জংশের খানের ৪ পুত্রের নামানুসারে ওই বংশের আসাদ্দি, বুদাই, মঙ্গল ও গাজি নামের ৪টি গোত্রের সৃষ্টি হয়েছে। জবসেন গ্রামের শতকরা ৯৫ভাগ লোকই পাইক বংশের। এরা সবাই জংশের খানের বংশধর বলে দাবী করেন। ঐ গ্রামের বৃদ্ধা ফরিদা বেগম জানান, বৃটিশ আমলে যবসেন গ্রামের জোনাব আলী পাইক নামের তার (জংশের খানের) এক ভক্ত জংশের খানের কবরস্থানটি পাঁকা করেন। কথিত মতে কবরস্থানটি নির্মাণের পর জোনাব আলী রাতে ঘুমের ঘরে স্বপ্নে দেখেন জংশের খান তাকে বলেছে তুমি আমার হাটুর উপর ওয়াল তৈরি করেছ এতে আমি ব্যাথা পাচ্ছি, দ্রুত ওয়াল ভেঙ্গে ফেল। জোনাব আলী পাইক স্বপ্ন দেখার পর কবরের ওয়াল ভেঙ্গে ১৮ হাত লম্বা একটি কবরস্থান তৈরি করেন। এরপর থেকে জংশের খানকে এলাকার লোকজন তাকে পীর মোর্শেদ বলে মনে করেন। ফলে ২৫ জৈষ্ঠ্য এলাকাবাসী তার মাজারের পাশে ওরস মাহফিল করে আসছেন। যুগযুগ অতিক্রান্ত হওয়ায় জংশের খানের মাজারের চুনকাম খসে পরেছে সম্প্রতি এলাকাবাসী মাজারটির সংস্কারের কাজ করেন। এতিহাসিক এ মাজারটি দেখার জন্য প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা ভীর করছেন যবসেন গ্রামে। আবার অনেকেই রোগ মুক্তির আশায় মাজারে বিভিন্ন মালামাল সহ টাকা পয়সা দান করছেন। এলাকাবাসী মনে করছেন মাজারটি রক্ষনাবেক্ষন করা হলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীদের আরও আকৃষ্ট করা যেত।