এস এম শামীম, আগৈলঝাড়া (বরিশাল)
বরিশালের আগৈলঝাড়ার উত্তর শিহিপাশা গ্রামের শতীদাহ মঠ, ফুল্লেশ্রীর তাজমহল, গৈলা জমিদার মুন্সি বাড়ি, মনসা মঙ্গল কাব্যের রচয়িতা কবি বিজয় গুপ্তের মনসা মন্দির, গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া গ্রামের সৈয়দ আলাউদ্দিন ওরফে মনু মিয়ার বাড়িতে এখনও কালের সাক্ষী হয়ে রয়েছে ইংরেজ বিরোধী পলাশীর যুদ্ধের কামান ও দুর্গের ধ্বংসলীলা। তেমনি কালের সাক্ষী হয়ে আধুনা গ্রামে দাড়িয়ে রয়েছে সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলের কৃতিমান পুরুষ ছবি খাঁর হুজরা। যুগ যুগ পেরিয়ে গেলেও এসব ঐতিহাসিক নিদর্শন রক্ষনাবেক্ষনের জন্য এখনো নেয়া হয়নি কোন উদ্দ্যোগ। রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে ক্রমেই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে কালের সাক্ষী এসব প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো। রক্ষনাবেক্ষনের মাধ্যমে এসব প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো হতে পারে একটি পর্যটন কেন্দ্র। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ১৬শ’ খ্রীষ্টাব্দে সম্রাট আকবরের শসনামল থেকে পরবর্তী প্রায় ৬৬ বছর তৎকালীন বাকলার (বর্তমান বরিশাল) এ মগ সম্প্রদায় যুদ্ধ করেই স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করে। কথিত মতে তৎকালীন সময়ে মগের জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতনসহ ত্রাসের রাজত্বে বাকলার আকাশে কোন পাখি পর্যন্ত উড়েনি। মোঘল সেনারাও অসংখ্যবার মগের সাথে যুদ্ধ করে পরাজিত হয়। সম্রাট আকবরের পরবর্তী সময়ে সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে কিংকর ভূইয়ার পুত্র মদন মোহন ও ছবি খাঁকে বাকলার ফৌজদার হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। ছবি খাঁ বাকলার ফৌজদার হিসেবে নিযুক্ত হবার পর নিজের নেতৃত্বে নিজেই গড়ে তোলেন বিশাল সেনা দল। এক পর্যায়ে তিনি মগের বিরুদ্ধে শেষ বারের মতো যুদ্ধ ঘোষনা করেন। ছবি খাঁর সেই যুদ্ধে বাকলা থেকে মগদের বিতাড়িত হতে হয়। যুদ্ধ পরবর্তী সময় কৃতিমান পুরুষ বাকলায় ব্যাপক উন্ন্য়নমূলক কাজ করেন। যার প্রেক্ষিতে ছবি খাঁর নামানুসারে অসংখ্য রাস্তা, জাংঙ্গাল, পুল, দীঘিসহ ঐতিহাসিক নিদর্শন আজো রয়েছে বিদ্যমান। ১৭৭৯ সালে সরিকল নদীতে ইংরেজ সৈন্যদের সাথে জমিদারের সৈন্যদের ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। সেই যুদ্ধে সরিকল দুর্গের পতনের পর ইংরেজ সৈন্যরা নলচিড়া মিয়া বাড়িতে আক্রমনের প্রস্তুতি নেয়। জমিদার সৈয়দ ইমাম উদ্দিনও পাল্টা আক্রমনের প্রস্তুতি নেয়। এক পর্যায় গর্ভনর জেনারেল ওয়ারেন হেষ্টিং সৈয়দ ইমাম উদ্দিনকে বন্দী করতে সক্ষম হন। সৈয়দ ইমাম উদ্দিনের সেই যুদ্ধের কামানের ধ্বংসলীলা নলচিড়া মিয়া বাড়ির সম্মুখে আজোও কালের সাক্ষীহয়ে রয়েছে। সতীদাহ মঠ ঃ হিন্দু ধর্মের বেদ অনুসারে হাজার হাজার বছর ধরে সতীদাহ প্রথা (স্বামী মারা গেলে তার সাথে জীবিত স্ত্রীকে শ্মাশানে পুড়িয়ে দেয়া ) বিধান প্রচলিত ছিলো। এ প্রথার অবসান ঘটে ১৯৪৭ সালে বৃটিশ শাসনামলে রাজা রাম মোহন রায় ও ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের বিধান বলে। সতীদাহ ঘটনার ঐতিহাসিক নিদর্শন আজোও কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে রয়েছে আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের উত্তর শিহিপাশা গ্রামে। কারুকার্য খচিত মঠটি অযতœ-অবহেলায় আজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, প্রায়ই দেশের দূর-দূরান্তসহ সুদূর ভারত থেকেও সতীদাহ মঠটি দেখার জন্য লোকজন যাওয়া-আসা করছেন। তারা আরো জানান, অতিসম্প্রতি দখলদার সতীদাহ মঠের আংশিক অংশ ভেঙ্গে ফেলেছেন। ইতিহাস-ঐতিহ্য সমৃদ্ধ এসব ঐতিহাসিক নিদর্শন রক্ষনাবেক্ষনের জন্য এলাকাবাসী সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।